রিভিউঃ তিতুনি এবং তিতুনি

তিতুনি এবং তিতুনি

তিতুনি এবং তিতুনি

◾রিভিউঃ- “তিতুনি এবং তিতুনি” বইটি মূলত একজন নিরিবিলি পরিবেশে বেড়ে ওঠা শান্তশিষ্ট ছোট্ট মেয়ের জীবনযাপন ও অলৌকিক এক চরিত্রের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা।

এটি মূলত ছোটদের জন্য লেখা অসম্ভব সুন্দর একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি।এই বইটিতে লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর অসাধারণ লেখনশৈলী দিয়ে এই উপন্যাস টিকে তৈরি করেছে অবর্ণনীয় সুন্দর।

গল্পটিতে রয়েছে হাসি-কান্না,দুঃখ-কষ্ট,তামাশা। ভাই-বোনের দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি ঝগড়া মারামারি, অভিমান।এবং সর্বপরি বৈজ্ঞানিক কল্প চরিত্রের আলেক বিজ্ঞানের কিছু মজাদার ও ভয়ংকর ঘটনা।

নিচে বইটি সম্পর্কে পয়েন্ট আকারে আরও কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো-

-পটভূমিঃ উপন্যাসটি তৈরি হয়েছে তিনটি মূল পটভূমির আলেক।এছাড়াও আরও কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পটভূমিও রয়েছে।

প্রথমত একটি শান্তশিষ্ট মেয়ের সাথে তার পরিবার ভাই,আত্মীয় এবং প্রকৃতির সাথে কথপোকথন ভালোলাগা মন্দ লাগর অনুভূতি।তারপরে আসে অন্য তিতুনি নামক একটা চরিত্র এবং সেই তিতুনি এবং অন্য তিতুনি মিলে স্কুল বাড়ি এবং ফুপুর বাড়িতে গিয়ে নানান রকম ঘটনা ঘটায়।এবং সর্বশেষ আসে এন্টি হিরোয়িক চরিত্র।এক কথায় ভিলেন।

-গল্পের গঠনঃ গল্পটি দুইটি ডাইমেনশনে চলতে থাকে একটা দিকে থাকে তিতুনির সাথে তার বড় ভাই টোটন এবং তার ফুফাতো ভাই-বোন নাদু, দিলু ও মিলু এর খুনসুটি চলতে থাকে।এবং অন্যদিকে তিতুনির সঙ্গে অন্য তিতুনির আলাপআলোচনা চলতে থাকে।এবং এই গল্পের মাঝে তিতুনির স্কুলের কর্মকান্ড,তিতুনির ফুফার বাসার বর্ণনা রয়েছে।

-চরিত্র গঠনঃ চরিত্র গুলো সাধারণ এবং খুবই realistic বা বাস্তববাদী ছিল।আপনি চরিত্র গুলোর মাঝে নিজেকে অথবা আশেপাশের মানুষের সাথে মিলাতে পারবেন।তবে সকল চরিত্র গুলোই তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে অসাধারণ বাস্তবিক সুন্দর বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তুলেছে।

বইয়ের গল্পটিতে মূল চরিত্র গুলো হলো-

১.তিতুনি

২.অন্য তিতুনি

৩.তিতুনির বড় ভাই টোটন

৪.তিতুনির আব্বু এবং আম্মু

৫.তিতুনির ফুফাতো ভাই-বোন নাদু,দিলু,মিলু এবং তার ফুপু

৬.তিতুনির বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক

৭.ডক্টর শামিম ( ইন্টারন্যাশনাল সার্স ফর এলিয়েন লাইফ বা আই.এস.এ.এল এর সিনিয়র অফিসার)

৮.ডক্টর নাহার ( ইন্টেলিজেন্ট লাইফ ফার্মের বিহেভিয়ার এক্সপার্ট)

৯.প্রফেসর রিক গার্নার

১০.প্রফেসর বব ক্লাইড

-গল্পবাঁকঃ অনেক বড় ধরনের কোন গল্পবাঁক আমার কাছে চোখে পড়ে নি।তবে অন্য তিতুনির ২টা ডিসিশন আমার কাছে গল্প/চারিত্রিক বাঁক মনে হয়েছে।একটা তিতুনির ফুপুর বাসায় ঢাকা যাওয়ার সময় এবং আরেকটা ট্রেইলারের সময়কার ঘটনায় অন্য তিতুনির আচরণ প্রথমে আমরা কাছে কেমন যেন লেগেছিল।

-লেখনশৈলীঃ আজ পর্যন্ত পড়া মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কোন বই-ই আমার কাছে খারাপ লাগেনি।এবং উনার গল্প বলার দক্ষতা এবং ছোটদের উপযোগী করে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি উপস্থাপনের ক্ষমতা অসাধারণ।তার এই লেখাতে আমি অসাধারণ বাস্তববাদী চরিত্র,ঘটনার বর্ণনা পেয়েছি।আমি একই সাথে কেঁদেছি এবং অসম্ভব জোরে হেসেছিলাম।

-বিবিধঃ আমার কাছে তিতুনি চরিত্রটি অসম্ভব কিউট এবং সহজসরল মেয়ে হিসেবে ফুটে উঠেছে।তার প্রথমদিকের নিজের সাথে কথা বলা, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া অনেক সুন্দর লেগেছে।আপনি যদি তিতুনির সাথে গল্প আড্ডা দিতে চান তাহলে পড়তে হবে “তিতুনি এবং তিতুনি” নামক বইটি।

স্পয়লার এলার্ট ⚠️

🔻আপনারা যার বইটি পড়েই সকল আনন্দ নিতে ইচ্ছুক তারা নিচের কাহিনী সংক্ষেপ অংশটি স্কিপ করতে পারেন।আপনার শুধু উপরের রিভিউ এবং নিচের অংশগুলো পড়তে পারেন।তবে আমি যতটুকু সম্ভব স্পয়লার না করার চেষ্টা করেছি!

আমি নিচে অনেক সোজাসাপটা রসকষহীন কাঠখোট্টা ভাবে কাহিনির ব্যাখ্যা দিয়েছি।এবং ঠিক কোন ধরনের বিষয়গুলো কোন অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোই বলেছি।তাই যদি বইটি সম্পর্কে পড়ার মাধ্যমে ইন্টারেস্ট তৈরি করতে চান তাহলে এই অংশটুকু স্কিপ করায় ভালো।

◾অধ্যায় ভিত্তিক কাহিনী সংক্ষেপঃ-

অধ্যায় ১. প্রথম অধ্যায়ে তিতুনির বাড়ির বর্ণনা এবং তিতুনির সাথে তার বড় ভাইয়ের অন্যায় দুষ্টামির বর্ণনা দেওয়া আছে।এবং এই অধ্যায়ে তিতুনির নিজের কিছু অভিমানী মনের গোপন কথপোকথন তুলে ধরা হয়েছে।এবং আকাশ থেকে একটা বিশাল ধরনের উল্কাপিণ্ড পড়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

অধ্যায় ২-৪. এখানে মূলত তিতুনির সাথে অন্য তিতুনির পরিচয় হয়।এবং তিতুনি অতি সাবধানে একা-একা অন্য তিতুনিকে আবিষ্কার করে এবং তাকে বিভিন্ন কায়দায় লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে এবং এর মাঝে তিতুনির পরিবারের সাথে অন্য তিতুনির জন্য অনেক ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে।কিন্তু কেউই অন্য তিতুনির খোঁজ পায় না।

অধ্যায় ৫-৬. এখানে বর্ণনা করা হয়েছে তিতুনির মনের ইচ্ছেগুলো যেগুলো অন্য তিতুনি নিজে নিজে পূরণ করছে।এবং তিতুনির স্কুলের বিভিন্ন ঘটনা অন্য তিতুনির জন্য যেগুলো ঘটেছে।এবং বাংলা স্যারের সঙ্গে লোমহর্ষক মজার ঘটনাসমূহ।

অধ্যায় ৭-৮. এখানে মূলত তিতুনির পরিবারের ঢাকায় যাওয়ার ঘটনা,মাইক্রো ডাইভারের ঘটনা এবং অন্য তিতুনির কিছু অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা আছে।

অধ্যায় ৯-১১. উক্ত সময়ে তিতুনির ফুপুর বাসায় গিয়ে নাদু,দিলু ও মিলুর সাথে কিছু দুষ্ট মিষ্টি ঘটনার বর্ণনা।নাদুর কিছু খারাপ অভ্যাস এর কথা এবং সর্বশেষ অন্য তিতুনির দ্বারা তাদের শাস্তি পাওয়ার ঘটনা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।

অধ্যায় ১২-১৪. এখানে মূলত ট্রেইলারের ঘটনা এবং ডক্টর শামিমদের কিছু অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

অধ্যায় ১৫. এটি জানতে হলে পড়তে হবে “তিতুনি এবং তিতুনি” বইটি।

◾বই নিয়ে কিছু কথাঃ-(প্রচ্ছদ,মলাট, বাঁধাই,পেপার কোয়ালিটি…): বইটির পেপার কোয়ালিটি,বাঁধায় মলাট ও প্রচ্ছদ সবকিছুই অসাধারণ।বইটি হাতে নিলেই বুঝতে পারবেন বইটির লিখনশৈলী যেমন অসাধারণ তেমনই বইটির বাহ্যিক সৌন্দর্যও অসাধারণ।

-লেখক পরিচিতিঃ

——

    ——-


source: wikipedia

◾ভালো লাগা লাইন গুলোঃ-

১.“পৃথিবীতে কত রকম যন্ত্রপাতি কত আবিষ্কার-“

এলিয়েন তিতুনি বলল,“ধুর!এইগুলো কোনো আবিষ্কার নাকি?সব খেলনা।সেই খেলনা নিয়ে কী অহংকার।ট্রেইলারের ভেতর ছাগলগুলো ভাবছে….।এই কাঁচকলা।”

“কেন বলবো?তোমরা এত বড় বড় বৈজ্ঞানিক, তোমরা কেন নিজেরা সেটা বের করতে পারো না?”

২.“দূরে তাকিয়ে তাকিয়ে তিতুনি কল্পনা করে যে একদিন সে যখন বড় হয়ে অনেক বড় বিজ্ঞানী হবে,তখন তার অনেক টাকা-পয়সা হবে।

তখন সে দুই ট্রাক বোঝাই করে কাচের গ্লাস নিয়ে আসবে।আজকে যে গ্লাসটা ভেঙেছে ঠিক সে রকম গ্লাস।তারপর….”

৩. ভান করো তুমি কিছু জানো না।আমিও কিছু জানি না।মানুষকে কখনো লজ্জা দিতে হয় না।

নাদু,দিলু আর টোটন ঘরে বসে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকায়।একজন যদি আরেকজনকে লজ্জায় না দিবে তাহলে কী দেবে? কী বলে তিতুনি?

◾খারাপ লাগা লাইন গুলোঃ-

১. তারা বলল,”তোমার মস্তিষ্কের টিস্যু স্যাম্পল নেওয়ার জন্য তোমার খুলিতে ড্রিল করতে হবে,

সত্যিকারের মানুষের বেলাতে কখনোই এরকম একটা কিছু চেষ্টা করা হতো না-তুমি যেহেতু সত্যিকারের মানুষ নও,তুমি যেহেতু একটা এলিয়েন,

তোমার বেলায় এটা চেষ্টা করতে আইনগত কোন বাধা নেই।

২. “তুমি একটা সিরিঞ্জে করে দশ মিলিগ্রাম রিটাটিল নিয়ে এসো,আমি দেখতে চাই এই এলিয়েনটাকে অচেতন করা যায় কি না।”

ডক্টর নাহার ইতস্তত করে বলল,”কাজটা কি ঠিক হবে?”

বিদেশিগুলো বলল,”বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাঝে কোন শর্টকাট নেই।”

৩. “এখন আর মেপে মেপে স্যাম্পল নেওয়ার সময় নেই।এটমিক ব্লাস্টার দিয়ে এলিয়েনটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিব,তখন তার ছিন্নভিন্ন অংশটা হবে আমাদের স্যম্পল।”

◾ভালোলাগা ও মন্দ লাগা এবং পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ- ভালোলাগায় বেশি।বইটি একটানা পড়ে শেষ করে ফেলেছি।কোথাও একটুও বিরক্তি লাগে নি।তবে কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে, যেখানে গল্পকে আরও বড় করা প্রয়োজন ছিল সেখানে কিছু জায়গায় ছোট করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় ছোট করলে ভালো হতো কিন্তু বেশি বর্ণনা দিয়ে ফেলেছে।তবে সর্বোপরি আমার ব্যাক্তিগত ভাবে অনেক ভালো লেগেছে।

◾বই পরিচিতি

বইয়ের নামঃ “তিতুনি এবং তিতুনি”

বইয়ের লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রকাশনীঃ কাকলী প্রকাশনী

প্রচ্ছদ,অলঙ্করণঃ সাদাতউদ্দীন আহমেদ এমিল

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৬৭

প্রচ্ছদ মূল্যঃ ৩০০ টাকা

ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৯.৫/১০

https://konthonir.com/কবিদাদুর-গল্প