“যা কিছু মহান সৃষ্টি,চিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।”
_কাজী নজরুল ইসলাম
তেমনি লেখালেখির জগতে নারীরাও যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নারী লেখক এবং সর্বপরী লেখকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন জনপ্রিয় ১০ জন বাঙালী নারী লেখককে নিয়ে!
জনপ্রিয় ১০ বাঙালি নারী লেখিকা:
👉বেগম রোকেয়া
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর। তিনিই প্রথম মুসলিম এবং বাঙালি নারী যিনি নারীমুক্তির জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। বড়ভাইয়ের কাছে তার বাংলা এবং ইংরেজি শিক্ষা। তিনি নারীশিক্ষার জন্য লড়াই করেছেন এবং নারীশিক্ষার অগ্রগতির জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সহ অনেক কাজ করেছেন। তার বিখ্যাত কিছু রচনা ‘মতিচুর’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘অবরোধ বাসিনী’ ইত্যাদি।
তার স্বরণে ৯ই ডিসেম্বর প্রতিবছর বাংলাদেশে রোকেয়া দিবস উদযাপন করা হয়। এই দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য নারীদের ;বেগম রোকেয়া পদক’ দেওয়া হয়।
১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন।
👉মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা
👉মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা – বাংলা সাহিত্যজগতের প্রথম মহিলা কবি মাহমুদা খাতুনের জন্ম ১৯০৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। তিনি শুধু প্রথম মহিলা কবিই নন, গন্দ ছন্দ এবং সনেটাকার কবিতা লেখার দিক থেকেও তিনিই প্রথম মহিলা কবি। তার কবিতায় ফুটে উঠেছে বাংলার প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র।এছাড়াও তিনি প্রথম মুসলিম কবি যিনি আধুনিক কবিতা লিখেছিলেন। সমাদরের অভাবে তিনি স্বাধীনতার পর সভা সমাবেশ এড়িয়ে চলতেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পসারিণী।এটি ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে ৭১ বছর বয়েসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
👉অনুরূপা দেবী
👉অনুরূপা দেবী- বাঙালী ঔপন্যাসিক অনুরূপা দেবীর জন্ম ১৮৮২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর । তিনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন রানী দেবী নামে।তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৫৮ সালের ১৯ শে এপ্রিল।
তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনা-
✒️পোষ্যপুত্র
✒️বাগদত্তা
✒️ উত্তরায়ণ
✒️পথহারা
✒️জীবনের স্মৃতি কথা
✒️বিচারপতি ইত্যাদি
অনুরূপা দেবী বিভিন্ন সম্মাননা এবং উপাধি অর্জন করেছিলেন-
- কুন্তলীন পুরস্কার
- ধর্মচন্দ্রিকা (উপাধি)
- ভারতী (উপাধি)
- জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক
- ভুবন মোহিনী দাসী স্বর্ণপদক
👉জাবেদা খানম
👉জাবেদা খানম- বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রথম পরিচালক জোবেদা খানমের জন্ম ১৯২০ সালের ৫ই মার্চ। বাংলাদেশী শিক্ষাবীদ জাবেদা খানম বাংলাদেশ মহিলা সমিতির চেয়ারপার্সন এরও দায়িত্ব পালক করেছিলেন।
তার উলেখযোগ্য কিছু রচনা।
✒️একটু সুরের মৃত্যু (ছোটগল্প সংকলন)
✒️অভিশপ্ত প্রেম
✒️বানামার্মার
✒️অনন্ত পিপাসা ইত্যাদি।
তিনি একুশে পদক এবং কিশোর সাহিত্যের জন্য অগ্রণী পুরস্কার অর্জন করেন। জোবেদা খানম ১৯৮৯ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।
👉খোদেজা খাতুন
👉খোদেজা খাতুন- বাংলাদেশী লেখিকা খোদেজা খাতুনের জন্ম ১৯১৭ সালের ১৫ ই আগস্ট। তিনি একজন শিক্ষাবিদও ছিলেন। তার বিখ্যাত কিছু রচনা –
✒️বেদনার এই বালুচরে
✒️শেষ প্রহরের আলো
✒️সাগরিকা
✒️একটি সুর একটি গান ইত্যাদি
খোদেজা খাতুন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকসহ অন্যান্য পুরস্কার এবং সম্মাননা অর্জন করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন।
মান কুমারী বসু
👉মান কুমারী বসু- বিখ্যাত নারী লেখক এবং কবি মানকুমারী বসুর জন্ম ১৮৬৩ সালের ২৫ শে জানুয়ারি।তিনি মূলত স্ত্রী চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেসময়ের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করার জন্য সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। তিনি অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশের জন্য ভারত সরকারের থেকে আমৃত্যু বৃত্তি পেয়েছিলেন।
তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রচনা-
✒️শুভ সাধনা
✒️প্রিয় প্রসঙ্গ
✒️বিভূতি
✒️কাব্যকুসুমাঞ্জলি
✒️পুরাতন ছবি
✒️বাঙালি রমনীদের গৃহকর্ম ইত্যাদি।
তিনি বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি- রাহজলক্ষী, শোভা, অদৃষ্টচন্দ্র, কুন্তলীন পুরস্কার, ভুবন মোহনী সুবর্ণপদক, জগত্তারিণী সুবর্ণপদক। মানকুমারি বসু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৪৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর।
👉কামিনী রায়
👉কামিনী রায়-নারীবাদি লেখিকা কামিনী রায়ের জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর। তিনি প্রথম নারী হিসেবে স্বাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন ‘জনোইক বঙ্গমহিলা’ নামে।পিতামহের হাত ধরে আবৃত্তি শিক্ষার শুরু এবং সেখান থেকেই সাহিত্যসাধনার সুচনা কামিনী রায়ের।
তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম-
✒️নির্মাল্য
✒️পৌরাণিকী
✒️অশোক সঙ্গীত
✒️অম্বা
✒️শ্রাদ্ধিকী ইত্যাদি।
জগত্তারিনী স্বর্ণপদক সহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেন কামিনী রায়। অসামান্য এই প্রতিভা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।
কুসুমকুমারী দাশ
👉কুসুমকুমারী দাশ- আদর্শ ছেলের মতো বিখ্যাত সব কবিতার রচিয়াতা কুসুমকুমারী দাশের জন্ম ১৮৭৫ সালে। তিনি জীবননান্দ দাশের জন্মদাত্রী। তার পত্রিকায় প্রকাশিত অধিকাংশ কবিতাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা মুকুল’। এছাড়াও তার একটি গল্পগ্রন্থও রয়েছে- ‘পোরাণিক আখ্যায়িকা’।
কুসুমকুমারী দাশ নারীত্বের আদর্শ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে কলকাতায় মৃত্যবরণ করেন।
বাংলাদেশের সেরা থ্রিলার লেখক
👉বেগম সুফিয়া কামাল
👉বেগম সুফিয়া কামাল- নারী আন্দলনের পথিকৃৎ সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন। তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে।
তার অসংখ্য রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি –
✒️সাঁঝের মায়া
✒️মন ও জীবন
✒️মৃত্তিকার ঘ্রাণ
✒️কেয়ার কাটা (গল্প) ইত্যাদি।
বেগম সুফিয়া কামাল বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেন। অসামান্য এই ব্যক্তিত্বের অন্তিম কাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর।
লীলা মজুমদার
👉লীলা মজুমদার- ভারতীয় লেখিকা লীলা মজুমদারের জন্ম ১৯০৮ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি। কলকাতা ইউনিভার্সিটির ইংরেজী পরীক্ষায় লীলা মজুমদার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন।সাত্যিজগতে তিনি প্রবেশ করেন ১৯২২ সালে লক্ষীছাড়া গল্পের মাধ্যমে।
তার কয়েকটি বিখ্যাত রচনা-
✒️গল্পস্বল্প
✒️টং লিং
✒️হলদে পাখির পালক
✒️মাকু
✒️পাকদন্ডী(আত্মজীবনী)
তিনি আনন্দ পুরস্কার,শিশু সাহিত্য পুরস্কার,রবীন্দ্র পুরস্কার,বিদ্যাসাগর পুরস্কার, ডি লিট সহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেন।