সমরেশ মজুমদারের জীবনী

সমরেশ মজুমদারের জীবনী

সমরেশ মজুমদার তাঁর অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে বাংলার অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে পাঠকমন জয় করেছেন।

জন্ম  ও প্রথম জীবন

সমরেশ মজুমদারের জীবনী

শব্দের এই রূপকার জন্মগ্রহণ করেন ১০ই মার্চ ১৯৪২ সালে ( ২৫শে ফাল্গুন ১৩৪৮ সন )। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা বাগানে।স্কুলের ছাত্রজীবন কেটেছে জলপাইগুড়িতে।তার এই সময়ের কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে উত্তরাধিকার উপন্যাসে। তিনি জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন।তিনি কোলকাতা  স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন।

সমরেশ মজুমদারের প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখা হয়েছিল মঞ্চনাটক হিসেবে। সেখান থেকেই তাঁর তার লেখক জীবনের শুরু। গ্রুপ থিয়েটার তিনি প্রচন্ড ভালোবাসতেন। তার ‘অন্যমাত্রা’ গল্পটি দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে ছাপানো হয়েছিল।

লেখালেখির শুরু

সমরেশ মজুমদারের বইয়ের তালিকা

সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল। তিনি তার অসাধারণ লেখনি শুধু মাত্র গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী থেকে কিশোর উপন্যাস লেখাতেও তিনি অসাধারণ সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন।

সমরেশ মজুমদারের জীবনী
  • ১। সত্যমের জয়তে
  • ২।আকাশ না পাতাল
  • ৩। তেরো পার্বণ
  • ৪। সওয়ার
  • ৫।কালবেলা
  • ৬।কাল পুরুষ
  • ৭। গর্ভধারিণী
  • ৮। হৃদ্যয় আছে যার
  • ৯। তীর্থযাত্রী
  • ১০। টাকাপয়সা
  • ১১। ভালোবাসা থেকে যায়
  • ১২। নিকট কথা
  • ১৩। ডানায় রোদের গন্ধ
  • ১৪। জলছবির সিংহ
  • ১৫। মেয়েরা যেমন হয়
  • ১৬। একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন)
  • ১৭। সর্বনাশের নেশায়
  • ১৮। ছায়া পূর্বগামিনী
  • ১৯। সূর্য ঢলে গেলে
  • ২০। আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে
  • ২১। অনেকেই একা
  • ২২। অগ্নিরথ
  • ২৩। আট কুঠুরি নয় দরজা
  • ২৪। আত্মীয়স্বজন
  • ২৬।আবাস
  • ২৭। আমাকে চাই
  • ২৮। উজান গঙ্গা
  • ২৯। কুল্কুন্ডলিনী
  • ৩০। কষ্ট কষ্ট সুখ
  • ৩১। কেউ কেউ একা
  • ৩২। জনযাজক
  • ৩৩। জলের নিচে প্রথম প্রেম
  • ৩৪। জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ
  • ৩৫। দায়বন্ধন
  • ৩৬। দিন যায় রাত যায়
  • ৩৭। দৌড়
  • ৩৮। বড় পাপ হে (গল্প)
  • ৩৯। কালোচিতার ফটোগ্রাফ
  • ৪০। আকাশ কুসুম
  • ৪১। স্বরভঙ্গ
  • ৪২। ঐশ্বর্য
  • ৪৩। আকাশের আড়ালে আকাশ
  • ৪৪। কালাপাহাড়
  • ৪৫। অহংকার
  • ৪৬।শয়তানের চোখ
  • ৪৭। হৃদয়বতী
  • ৪৮। সন্ধেবেলার মানুষ
  • ৪৯। বুনোহাঁসের পালক
  • ৫০। জালবন্দী
  • ৫১। মোহিনী
  • ৫২। সিংহবাহিনী
  • ৫৩। বন্দীনিবাস
  • ৫৪। শেষের খুব কাছে
  • ৫৫। জীবন যৌবন
  • ৫৬। আহরণ
  • ৫৭। বাসভূমি
  • ৫৮। এখনও সময় আছে
  • ৫৯। স্বনামধন্য
  • ৬০। কলিকাল
  • ৬১। স্বপ্নের বাজার
  • ৬২। কলকাতা
  • ৬৩। অনুরাগ
  • ৬৪। তিনসঙ্গী
  • ৬৫। ভিক্টোরিয়ার বাগান
  • ৬৬। সহজপুর কতদূর
  • ৬৭। অনি
  • ৬৮। সিনেমা ওয়ালা
  • ৬৯। বিনিসুতোয়
  • ৭০। মনের মতো মন
  • ৭১। মেঘ ছিলো বৃষ্টিও
  • ৭২। শরণাগত
  • ৭৩।শ্রদ্ধাঞ্জলি
  • ৭৪। সাতকাহন
  • ৭৫। সুধারাণী ও নবীন সন্নাস্যী
  • ৭৬। হরিণবাড়ি
  • ৭৭। কইতে কথা বাধে
  • ৭৮। মধ্যরাতের রাখাল
  • ৭৯। আকাশে হেলান দিয়ে
  • ৮০। এত রক্ত কেন
  • ৮১। এই আমি রেণু
  • ৮২। মৌষলকাল
  • ৮৩। উনিশ বিশ

পুরস্কার

সমরেশ মজুমদার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু পুরষ্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্যে আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরষ্কার, এবং আইয়াইএমএস পুরষ্কার জয় করেন।

স্ক্রিপ্ট লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারীএবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। এছারাও ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসেবে পেয়েছেন বিভিন্ন পুরষ্কার।

সমরেশ মজুমদারের কিছু বিখ্যাত বাণী

“মৃত্যু কী সহজ, কী নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়”_ সমরেশ মজুমদার

“ ছাইটা হলো স্মৃতি, আগুন্টা হলো বর্তমান।“

“ নিজের বোকামি বুঝতে পারার পর কারো দুঃখ হয় কারো হাসি পায়।“

গর্ভধারিণী উপন্যাস থেকে সংগৃহীত সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয় কিছু বাণী

“ পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙালি মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে পারে না।“

“ নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েগুলো তাদের সব রকম কঞ্জারভেটিভ ধারণা বুকে পুষে রেখে এমন ভাবভঙ্গী করে জেন পৃথিবীর সব ছেলেই তাদের দিকে হাম্লে পরছে।“

“ পুরুষ নতুন প্রজন্ম লালন করতে পারে, বীজ বপন করতে পারে,কিন্তু তাকে নির্মাণ করতে পারে না।“

‘মেয়েরা যেমন হয় উপন্যাস থেকে কিছু উক্তি

“ মেয়েরা গণেশের মত, মা দুর্গার চারপাশে পাক দিয়ে যে জগত দেখে তাতেই তৃপ্তি আর পুরুষেরা কার্তিকের মত সারা পৃথিবী ঘুরে আসে অথচ কী দেখে তা তারাই জানে না।“

“ ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে কখন অভিনয় করে তারা তা নিজেও জানে না।“

“ মরে যাওয়া মানুষ যে প্রতিক্রিয়া রেখে যায় তার দায় বইতে হয় অনেকদিন। কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবন।“

“ পৃথিবীর অর্ধেক কাজ যুক্তি দিয়ে হয়না।“

“ মেয়েরা হলো জমির মত,তাদের চারপাশে নদীর স্রোত। ভালো বাঁধ না দিলে সেই জমি নদী গ্রাস করে নেবেই।আর বাঁধ ভেঙ্গে মেয়েদের পক্ষে নদীর সঙ্গে লড়াই করা কতোটা সম্ভব তা সময় বিচার করবে।“

“ কোন মানুষেরে যদি জেদ,পরিশ্রম, সততা এবং সেই সঙ্গে প্রতিভা থাকে জীবন তাকে সততা দেবেই।“

“ আকাঙ্ক্ষার জিনিস পাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা যেমন হেলায় ফেলে রাখে ঠিক তেমনি করে ভালোবাসা ফেলে রাখতে নেই। কারণ ভালোবাসা প্রতিমুহূর্তে প্রতিপালিত হতে চায় তাকে আগলে রাখতে হয়।“

“ প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধয় তার শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না”

“ যে নিজের চোখের জল ফেলে না অথচ ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হয় তার কষ্ট সবাই বুঝতে পারে না”

“ মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে তাকে ঘৃণা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ থেকে যায়।“

গহন উপন্যাসের কিছু কথা

“ স্বাধীনতার জনা যোগ্য হতে হবে তারপর বাইরের স্বাধীনতা আদায় করতে হবে।“

“ শাসন শুনতে যতই খারাপ লাগুক, যে মানুষের জীবনে শাসন করার মানুষ থাকে না তার মত অভাগা আর কে আছে।“

সমরেশ মজুমদারের প্রতিটি উপন্যাসের বিষয়, শব্দচয়ন, গল্প বলার ভঙ্গী, আঙ্গিক গতানুগতিকতায় একঘেয়েমি লাগে না কখনোই। এই কারণেই বাংলা সাহিত্যের পাঠক পাঠিকারা তার প্রায় প্রথম আবির্ভাবেই তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। শুরু থেকেই তিনি এভাবেই পাঠকমন জয় করে আসছেন

আপনি কী এমন আরও পড়তে চান,তাহলে কন্ঠনীড়ের সঙ্গেই থাকুন।