অনেক সময়ই দেখা যায়, সন্তানের জন্মের পর মা ডিপ্রেশনে চলে যান। বাচ্চার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখান না। সন্তান জন্মের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে যদি মা বিষন্নবোধ করে তাহলে তাকে বলা হয় পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন।
পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশনের লক্ষণঃ
- কারণ ছাড়াই নতুন মাকে কান্না করতে দেখা যায়।
- নতুন মা সবসময় হতাশা অনুভব করে এবং মনমরা থাকে।
- অল্পেই চিন্তিত,বিরক্ত এবং অস্থির হয়ে যায়।
- কাজে মনযোগ দিতে পারে না।
- কথা মনে রাখতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়।
- পছন্দের জিনিসগুলো আর পছন্দ হয় না।অনেক সময় পছন্দের কাজ করতে বিরক্তি অনুভব করে।
- ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে আবার কমেও যেতে পারে।
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা হতে পারে।
- সবার থেকে দূরে দূরে থাকতে চায়। অর্থাৎ একা থাকতে চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
- বাচ্চার যত্ন নিতে চায় না।
- বাচ্চার সাথে যোগ স্থাপন করতে অসুবিধা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ নারীঃ
অনেক নারীদের জীবনে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ইতিহাস থাকে। আবার অনেকেই সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চিত থাকে। সবচেয়ে বেশি যেটা হয়, অনেকে গর্ভাবস্থায় বা সন্তান জন্মদানের পর মানুসিক চাপে ভোগে। আবার অনেক নারীরা পরিবার থেকে যথেষ্ট সাহায্য পায় না,এবং সবকিছু সমন্বয় করা নিয়ে চিন্তিত থাকে। অনেকসময় স্বামী স্ত্রীকে অত্যাচার করে। স্বামীর কোনো আয় না থাকলে তার চাপ পড়ে স্ত্রীর উপর। এসব নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
কারণঃ
- সন্তান জন্মের পর মায়ের শরীরে নানারকম হরমনের পরিবর্তনের ফলে তারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।
- বাচ্চার ঠিকমত যত্ন নেওয়া অনেক কষ্টের । ফলে মা বিশ্রাম নিতে পারেন না।
- অনেকেই সন্তানের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং চিন্তিত থাকে
ভ্রান্ত ধারণাঃ
আমাদের সমাজ এখনও মনে করে আবেগীয় সমস্যার জন্য সাহায্য নেওয়াটা দুর্বলতা। কিন্তু সময়মত চিকিৎসা নিলে মা দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় এবং চাপ মোকাবিলা করার দক্ষতা অর্জন করে।
আসল কথা হলো, মায়ের গাফিলতির কারণে পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন হয় না। তাকে দোষ দেওয়া উচিত নয়।
চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঃ চিকিৎসা না নিলে এটি মা-শিশুর সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মায়েরা অনেকদিন ভোগার কারণে সুন্দর মুহূর্তটি হারিয়ে ফেলে। ডিপ্রেশনে ভোগা মায়েরা বাচ্চাদের সময়মত ও পরিমাণ্মতো বুকের দুধ খাওয়াতে পারে না।ফলে বাচ্চা পুস্টিহীনতায় ভোগে। মায়েরা নিজেরাও ঠিকমতো নিজের যত্ন নেয় না। মা ও বাচ্চার এমন খারাপ সম্পর্ক পরবর্তীতে বাচ্চার মানসিকতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব স্বামী এবং পরিবারের উপরেও পরে।
কিছু ক্ষেত্রে মা আত্মহত্যারও চেষ্টা করে বা বাচ্চার ক্ষতি করতে চায়! যত তারাতারি সম্ভব লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরী।
পরিবারের সদস্যরা যেভাবে সাহায্য করতে পারে-

মায়ের দুশ্চিন্তাগুলো বুঝে পরিবারের সদস্যরা তার প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। তারা দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। মায়ের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ না দিয়ে তারা তাকে কাজে সাহায্য করতে পারে।
এভাবে সকলের সহযোগিতা পেলে মা দ্রুতই পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে পারে।
✒সুমাইয়া শেফা